ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

আইজিপি তা জানেন না কোন পদে থেকে কী বলতে হয় -ড. মিজান

এনটিভি :

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড.মিজানুর রহমান বলেছেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক কোন পদে থেকে কী বলতে হয় তা জানেন না। একজন আইজিপি হিসেবে তিনি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন।

আজ রোববার চট্টগ্রামের একটি অনুষ্ঠানে আইজিপির সমালোচনার জবাবে এনটিভি অনলাইনকে এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।

ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সরকারের এত বড় পদে থেকে একজন আইজিপির এ ধরনের বক্তব্য শোভা পায় না। উনার (আইজিপির) জানা দরকার কোন পদে থেকে কী সমালোচনা করা যায়। একজন আইজিপি হিসেবে তিনি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। উনার মুখে এটা কোনোভাবে শোভনীয় নয়।’

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘সারা দেশে পুলিশ যে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করছে তাতে অনেক সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। এর আগের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি আশঙ্কার কথা বলেছি। আমি সাধারণ মানুষের পক্ষে তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছি। এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু একজন পুলিশের মহাপরিদর্শক আমার বিষয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা কোনোভাবে শোভনীয় নয়।’

ড. মিজান বলেন, ‘পুলিশ মহাপরিদর্শক আমার কথার গুরুত্ব ও মর্ম উপলব্ধি করতে না পেরে তিনি এসব অমূলক কথা বলেছেন। উনি শুধু আমার কথার জবাব দেওয়ার জন্য এ ধরনের মন্তব্য করেছেন। আমার বিষয়ে কথা না বলে আইজির উচিত সারা দেশে যেভাবে হত্যাকাণ্ড চলছে এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো।’ তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণ মানুষের পক্ষে কাজ করি। কে কি বলল তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি ন্যায় ও সত্যের পক্ষে থাকব। আমি ভালো বলছি না খারাপ বলছি সেটা সাধারণ মানুষ বিবেচনা করবে। তবে একজন আইজি এভাবে মন্তব্য করে নিজেদের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।’

চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইনে আজ রোববার আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞেস করলেই হুট করে কথা বলে দেন। উনি তথ্য না নিয়ে, না বুঝে, না শুনেই মন্তব্য করেন।

এর আগে রোববার সকালে চট্টগ্রামে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান নিয়ে গ্রেপ্তার বাণিজ্যের আশংকা করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড.মিজানুর রহমানের সমালোচনা করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক।

চট্টগ্রামে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে আইজিপি বলেন, আমাদের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান,জিজ্ঞেস করলেই উনি হুট করে কথা বলে ফেলেন। উনি তথ্য না নিয়ে,না বুঝে,না শুনে হুট করে কমেন্ট (মন্তব্য) একটা করে ফেলেন।

‘আজকের পত্রিকায় উনার কমেন্ট দেখেন,পুলিশ নাকি গ্রেফতার বাণিজ্য করছে। পুলিশ গতকাল ৩ হাজার ১১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।এদের কতজন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি,কতজন জঙ্গি,কতজন মাদক ব্যবসায়ী এই তথ্য উনি নেননি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া একটা লোককেও গ্রেফতার করা হয়নি।পরিস্কার নির্দেশ দেয়া আছে, কোন নির্দোষ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা যাবেনা।আমি বারবার বলেছি, কোন নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করলে আমাকে তথ্য দেন,আমি আমার অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

‘উনি এখন বলছেন গ্রেফতার বাণিজ্য।পুলিশ কাজ করলেই যদি সমালোচনা করে ফেলেন তাহলে তো পুলিশ কাজ করতে পারবেনা।পুলিশ তো জনগণের জন্য কাজ করছে।কাজ করলে সামান্য ত্রুটি থাকতেই পারে,কিন্তু ঢালাও যদি অভিযোগ করেন পুলিশ তো কাজ করার উৎসাহ পাবেনা।’ বলেন আইজিপি। সমাবেশে গণমাধ্যমেরও সমালোচনা করে আইজি একেএম শহীদুল হক। তিনি বলেন,আমরা দেশব্যাপী অভিযান চালাচ্ছি।১০ জুন থেকে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। ভালো কাজ হচ্ছে। কিছু কিছু পত্রপত্রিকা এটাকে নেতিবাচকভাবে দেখছে। পুলিশ কাজ করলেও সমস্যা,না করলেও সমস্যা। পুলিশের কাজ কোনোটাই তাদের ভাল লাগে না।

‘নীরবে কাজ করলে বলে পুলিশ কোনো কাজই করে না। পুলিশ ব্যর্থ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো জবাবদিহিতা নেই। পুলিশ যখন সরবে কাজ করে তখন বলে ঢাকঢোল পিটিয়ে কাজ করছে। এগুলো আসল কাজ করার জন্য করছে না। তাহলে আমরা যাব কোথায়?’

আইজিপি বলেন, ‘আমার কথা হলো, পুলিশ তো বিভিন্ন কৌশলে কাজ করবে। প্রকাশ্যে করবে, গোপনে করবে, নানাভাবে করবে। এগুলো পুলিশের কর্মকৌশল। যদি কোনো নিরাপরাধ লোক, মামলার আসামি না- এমন লোক কিংবা সন্দেহভাজন নন এমন লোক, তাকে যদি গ্রেপ্তার করা হয় তবে আমাকে জানান। আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন শ্যুটিং ক্লাবে আয়োজিত সুধী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিএমপি কমিশনার মো.ইকবাল বাহার।

এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন,নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার রহুল আমিন, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো.শফিকুল ইসলাম, সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, প্যানেল মেয়র জোবাইদা নার্গিস খান, বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি মঈনউদ্দিন আহমেদ মিন্টু, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার, স্বাচিপ নেতা ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান।

পাঠকের মতামত: